‘সাড়ে ৪ কোটি বাজেট মির্জার, টাকা ঘরে ফেরনো অসম্ভব, তবুও পার্ট ২ বানাব’

‘সাড়ে ৪ কোটি বাজেট মির্জার, টাকা ঘরে ফেরনো অসম্ভব, তবুও পার্ট ২ বানাব’

ইদে মুক্তি পেয়েছে অঙ্কুশ হাজরা অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি ‘মির্জা’। ময়দান, বড়ে মিঁয়া ছোটে মিঁয়ার মতো বিগ বাজেট বলিউড ছবির পাশেও নিজের ছাপ ফেলেছেন ‘মির্জা’ অঙ্কুশ। দীর্ঘদিন পর বাংলা কর্মাশিয়াল ছবি হালে পানি পেল অঙ্কুশের হাত ধরে। মুক্তির পর পাঁচদিন অতিক্রান্ত। বক্স অফিসে কেমন ব্যবসা করল এই ছবি? মির্জা পার্ট ২ নিয়ে কী ভাবছেন অঙ্কুশ? জানতে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেতা-প্রযোজকের সঙ্গে। অঙ্ক কষেই প্রযোজনায় নেমেছেন, বুঝিয়ে দিলেন অঙ্কুশ। 

মির্জা নিয়ে চারিদিকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। প্রযোজক হিসাবে কতটা স্বস্তিতে অঙ্কুশ? মুচকি হেসে আমাদের প্রতিনিধিকে বললেন, ‘সত্যি খুব ভালো লাগছে। এই ধরণের কমার্শিয়াল ছবি এলে তবেই সেই যুগ ফিরবে। মির্জা একটা সেনসিবল কমার্শিয়াল ছবি। তবে প্রযোজক হিসাবে দুঃখের জায়গা একটাই! গ্রাম ও শহরতলির সিঙ্গলস্ক্রিনগুলোকে অনেক উন্নত হতে হবে। ওই জায়গাগুলোতে অনেক বছর ধরে বাংলা বাণিজ্যিক ছবি থেকে মানুষ সরে গেছে। মানুষকে ফেরাতে গেলে মির্জার মতো ছবি আরও তৈরি হতে হবে’।

প্রযোজক হিসাবে যে রিস্কটা নিয়েছিলেন, তা সফল বলে মনে হচ্ছে? খানিক ভেবে জবাব, ‘আমার পক্ষে তো ব্যাক টু ব্যাক মির্জা বানানো সম্ভব নয়। আমি নিশ্চিতভাবে এক বছর বা দু-বছর পর মির্জা টু নিয়ে আসব। কিন্তু বাকি সবাইকে ভালো বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে আসতে হবে। ২০১৪-১৫ সালেও ৭০০-৮০০ সিটের সিঙ্গল স্ক্রিন ভরে যেত ছবির প্রথম দিনেই। কিন্তু সেই মানসিকতাতেও জং ধরেছে, আর হলে গিয়ে ছবি দেখার অভ্যাসেও জং ধরেছে। সেখানে আমাদের লড়াইটা লড়তে হবে।’

মির্জার বক্স অফিস কালেকশন নিয়ে অনেক চর্চা চলছে। আপনি এখনও কোনও ফিগার দেননি… প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগে নায়ক দৃঢ় কন্ঠে জানালেন, ‘মির্জার যা বাজেট সেটা ঘরে তুলে আনাটা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ থিয়েট্রিক্যাল রান থেকে প্রযোজক ৫০% টাকা পায়। হয়ত স্যাটেলাইট রাইটস বা সব মিলিয়ে একটা সুন্দর জায়গায় ব্যাপারটা আসবে। কিন্তু কোনও বাংলা সিনেমাই এখন হলে চলার পর খরচের টাকা তুলতে পারে না। তাহলে আমাদের ওই ৭০-৮০ লক্ষের ছবি বানাতে হবে। মির্জা প্রায় সাড়ে চার কোটি বাজেটের ছবি। মির্জা যে টাকাই হল কালেকশন থেকে আয় করুক আমি তো পাব তার ৪৮ কিংবা ৫০%। সিনেমা হল থেকে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আয় করলেই সবাই লাফালাফি করে, অথচ প্রযোজক তো পায় ১ কোটি বা দেড় কোটি টাকা’।

আফসোসের সুরে অভিনেতা যোগ করলেন, ‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যে শোচনীয় জায়গায় আছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে দরকার কমার্শিয়াল বাংলা ছবি। কারণ এরপর আর বর্ধমান, বীরভূম, কালনা, রসুলপুর, শ্যাওড়াফুলিতে আর বাংলা ছবি চলবে না, আমরা বাংলা নয় শুধু কলকাতা ইন্ডাস্ট্রি হয়ে যাব’।

তাঁর আরও সংযোজন, ‘আজকাল অদ্ভূত একটা নেগেটিভিটি কাজ করে। ছবির বাজেটের সঙ্গে ৫০-৬০ লাখের গ্যাপ থাকলেই লোকে বলে ‘ফ্লপ ডিক্লেয়ার করে দে’। আমাদের এখানে মানুষের এদিক-ওদিক হলে সবাই আনন্দ পায়। আমি মির্জা পুজো বা ক্রিসমাসে রিলিজ করিনি। ইদে মুক্তি পেয়েছে, আমাদের ছবির কাছে সাত-দশ দিনের উইন্ডো ছিল না। এমনকী পয়লা বৈশাখটাও রবিবার পড়েছে। বাকি তো ওয়ার্কিং ডে’জ। তবুও মির্জা থেক আমার পাওনা, মাল্টিপ্লেক্সে বাংলা কমার্শিয়াল ছবিকে হ্যাটা করা হত, সেখানে মির্জা দর্শককে হলমুখী করেছে। মির্জা আমার কাছে বেবিস্টেপ, আমাকে আরও অনেক ধাপ পেরোতে হবে। বাংলায় জওয়ান বা পাঠানের মতো ব্যাপার নেই, মির্জা পুরোদস্তুর অ্যাকশন সিনেমা বলে তুড়ি মেরে ১৫ কোটির ব্যবসা করবে এমনটা নয়’।

ছবির বক্স অফিস নিয়ে চিন্তিত নন অঙ্কুশ। বললেন,’কেজিএফ উত্তর ভারতে ২০-২৫ কোটির ব্যবসা করেছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ভাগ ২০০-৩০০ কোটির ব্যবসা হাঁকিয়েছে। কারণ ছবিটা মানুষ নিয়ে নিয়েছিল। আমাদের মির্জা ছবিটাকে দর্শক গ্রহণ করেছে। সেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই আমি মির্জা টু বানাব। তাই বক্স অফিসটা ম্যাটার করছে না। বাংলায় বক্স অফিসের হাল এমনিতেই খারাপ। হল ভিসিটে গিয়ে আমি দেখেছি ২২ বছরের তরুণ-তরুণীও মির্জা দেখছে আবার ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীরাও এ ছবিটা দেখছে। দর্শক আমাদের গ্রহণ করেছে, সেটাই আমাদের সেরা পাওনা বক্স অফিস নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না’।

Entertainment