ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরেই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছি কানাডার। তবে খলিস্তান ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরার পর সেই বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়। এই আবহে কানাডার রফতানি প্রোমোশন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী মেরি এনজি ভারতের উদ্দেশে বললেন, ‘এই মুহূর্তে কানাডা নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের ওপর মননিবেশ করে রয়েছে।’ এশিয়া প্যাসিফিক কোঅপারেশন মিটিংয়ে মেরি বলেন, ‘এর আগেও আমার এবং কানাডা সরকারের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। একজন কানাডিয়ান নাগরিককে কানাডার মাটিতে খুন করা হয়েছে। সেই তদন্তের দিকেই আমাদের নজর। সেই তদন্ত শেষ হোক।’ এর আগে মেরির নেতৃত্বে একটি কূটনৈতিক দলের ভারতে আসার কথা ছিল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। তা স্থগিত করা হয়। এমনকী কানাডার ৪১ জন কূটনীতিককে ভারত থেকে সরিয়ে নিতে বলে দিল্লি। চাপের মুখে ৪১ কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে কানাডা।
এদিকে সম্প্রতি নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফের মুখ খুলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। সাংবাদিক লায়নেল বারবারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এস জয়শংকর বলেন, ‘আমরাও গণতন্ত্র, ওরাও গণতন্ত্র। বাক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাও একটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে আসে। সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর প্রয়োগ সহ্য করা খুবই অন্যায় হবে। আমরা নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে এখনও তদন্তের সম্ভাবনা খারিজ করিনি। কিন্তু কানাডার সরকার তো কোনও তথ্যই আমাদের হাতে তুলে দেয়নি। আমি কানাডার বিদেশমন্ত্রীকে বলেছিলাম, কোনও তথ্য থাকলে যাতে তা আমাদেরকে দেওয়া হয়।’ এরপর জয়শংকর বলেন, ‘আমরা অনুভব করি যে কানাডার রাজনীতি সহিংস এবং চরম রাজনৈতিক মতামতকে স্থা করেন দিয়েছে। এটা সহিংস উপায়ে ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করছে। এই লোকদের কানাডার রাজনীতিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এর আগে যখন ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা হল, অভিযোগ জানানোর পরও কানাডা সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।’
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে গুরুদ্বারের ভেতরেই গুলি করে হত্যা করা হয় খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে। হরদীপকে ২০ বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পঞ্জাবি অধ্যুষিত সারে অঞ্চলে থাকত হরদীপ। বিগত কয়েকবছরে কানাডার ভ্যানকুবারে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে খলিস্তানি বিক্ষোভের নেপথ্যে ছিল এই হরদীপ। কানাডায় মৃত হরদীপের বিরুদ্ধে এনআইএ-র চারটি মামলা ছিল। এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র সহ খলিস্তানি যোগের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গতবছর জুলাইতেই হরদীপের মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ। জানা যায়, হরদীপ খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিল। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্ব ছিল হরদীপের টাইগার ফোর্সের ওপর।